চাঁপাইনবাবগঞ্জ | রবিবার, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১ info@mohanonda24.com +৮৮ ০১৬৮২ ৫৬ ১০ ২৮, +৮৮ ০১৬১১ ০২ ৯৯ ৩৩
জাবের বিন হাইয়ান আধুনিক রসায়নের প্রবর্তক।

জ্ঞান-বিজ্ঞানে মুসলমানদের কোন অবদান নেই! (পর্ব-৩)

আ/স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশিত: ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৯:২০

আ/স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশিত: ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৯:২০

জাবের বিন হাইয়ান আধুনিক রসায়নের প্রবর্তক

জাবের বিন হাইয়ান আধুনিক রসায়নের প্রবর্তক। তার আগে রসায়ন পূর্ণাঙ্গ বিজ্ঞান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত ছিল না। তিনি কঠোর পরিশ্রম, ব্যাপক অনুসন্ধান, বিস্তার গবেষনা এবং দীর্ঘ অধ্যাবসায়ের মধ্য দিয়ে রসায়নের শাখা-প্রশাখাগুলোকে ভাগ করেন। তিনি রসায়ন শাস্ত্রের সকল প্রক্রিয়াগুলোর সাথে বিশেষভাবে পরিচিত ছিলেন। পূর্বের প্রক্রিয়াগুলোকে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে সংস্কার করে নিজের আবিষ্কৃত প্রক্রিয়াগুলোকে সুসংগঠিত ও শৃংখলতি করে তোলেন। একটি বস্তুর প্রাণ থেকে কিভাবে ক্লেদ বের করা যায়, কি করে বস্তুটির দেহ শুদ্ধ করা যাবে, কেমন করে পরিশুদ্ধ দেহকে তরল করা হয় এবং পরিশেষে পরিশুদ্ধ তরল দেহের সাথে কিভাবে প্রাণকে মিলিয়ে দেয়া যাবে, তা তিনি ব্যাপক ভাবে তার রসায়ন বিষয়ক গ্রন্থগুলোতে আলোচনা করেছেন।


জাবের বিন হাইয়ান বিন আব্দুল্লাহ আল-আযাদী ৭২১ খৃষ্টাব্দে জন্ম গ্রহন করেন। তার উপনাম আবু মূসা এবং উপাধি আবুল কিমিয়া বা রাসায়নের পিতা। তিনি জাফর আস-সাদিকের নিকট শরীয়তের বিধানাবলি, ভাষা-সাহিত্য এবং রসায়ন বিদ্যা অর্জন করেন। আব্বাসীয় খলীফা হারুনুর রশিদের (৭৮৬-৮০৯খৃ:) শাসনামলে তার রসায়ন চর্চার খ্যাতি দুনিয়াময় ছড়িয়ে পড়ে। সে সময় তার জন্মস্থানেএকটি রসায়ন গবেষনাগার ছিল বলে ঐতিহাসি পি কে হিট্টি উল্লেখ করেছেন। তিনি জীবনের শেষ বয়সে এসে খলীফা হারুনুর রশিদের মন্ত্রী জাফর বিন ইয়াহয়া বরমক্কী (৭৬৭-৮০৩খৃ:)-এর ব্যক্তিগত চিকিৎসক নিযুক্ত হন। ইরানের রায় শহরের অধিবাসী প্রখ্যাত চিকিৎসা বিজ্ঞানী আবু বকর রাজী (৮৬৫-৯২৩খৃ:) স্বরচিত ‘সিররুল আসরার’ গ্রন্থে লিখেছেন, “অধুনিক রসায়নের প্রথম ব্যক্তি জাবের বিন হাইয়ান আরবের জ্ঞানের জগৎকে সুভাশিত করেছেন।” ইংল্যান্ডের দার্শনিক ফ্রান্সেস বেকোন বলেন, “জাবের বিন হাইয়ান রসায়নের জগতে পন্ডিত ব্যক্তি, তাকে রসায়নের জনক বলা হয়।”

ফ্রান্সের রাসায়নিক এবং রাজনীতিবিদ মারসিলান বিরতুলুন (১৮৮৩-১৯০০খৃ:) বলেন, “জাবের বিন হাইয়ান রসায়নশাস্ত্রে অনুরুপ ব্যক্তিত্ব, দর্শনশাস্ত্রে এ্যরিস্টটোল যেমন।” আল্লামা যারকালী ‘আল-আলাম’ গ্রন্থে তার বিশালায়তনের ৫০০টি গ্রন্থের কথা উল্লেখ করেছেন। প্রখ্যাত ঐতিহাসিক ইবনে নাদিম (মৃ:১০৪৭খৃ:) তার বিখ্যাত ‘ফিহরাসত’ গ্রন্থে ইবনে হাইয়ানের রচনা সম্ভারের বিবরণ লিপিবদ্ধ করতে গিয়ে বলেন, “তার রচিত ছোট বড় কিতাবের সংখ্যা দুই হাজারের অধিক।” ইমাম ইবনে তাইমিয়া বলেন, “রসায়নবিদদের নিকট জাবের বিন হাইয়ানের রচনা সম্ভার অধিক প্রসিদ্ধ। তার গ্রন্থের সংখ্যা এতই বিপুল, পন্ডিত ব্যক্তিদের নিকটও যার বিরাট একটি অংশ অজ্ঞাত রয়ে গেছে।”


তার বর্ণাঢ্য রচনা সম্ভারের মধ্যে রসায়ন বিষয়ক শ্রেষ্ঠ কিতাবের নাম ‘আসরারুল কিমিয়া’, ‘উসূলুল কিমিয়া’, ‘আর-রাহমাহ’ ইত্যাদি। তার গ্রন্থগুলো বিভিন্ন ভাষায় অনুদিত হয়েছে। ইউরোপীয় ভাষায় তার গ্রন্থগুলো অনুবাদ করার সময় পাশ্চাত্যের লেখকরা তার নাম জেবার হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি একাধারে দার্শনিক, রসায়নশাস্ত্রবিদ, চিকিৎসা বিজ্ঞানী, জ্যোতির্বিজ্ঞানী এবং মহাকাশ বিজ্ঞানী। বরেণ্য আওলিয়া যুননুন মিসরী ছিলেন জাবের বিন হাইয়ানের ছাত্র। বিশিষ্ট মুসলিম দার্শনিক আল-কিন্দী আল-ক‚ফী ইবনে হাইয়ানের জ্ঞানে প্রভাবিদ হয়েছেন। ৮১৩ খৃষ্টাব্দে জাবের বিন হাইয়ান ক‚ফায় ইন্তেকাল করেন।

পরবর্তী পর্ব আসছে...



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: