03/12/2025 আ. লীগ নেতাকে মেরে পুকুরে ফেলে দিলো ছাত্রলীগ নেতা
স্টাফ রিপোর্টার
৩ মে ২০২৩ ০৪:৫২
নিউজ ডেস্ক: মাদারীপুরে আওয়ামী-লীগের নেতাকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। এমনকি মারধর শেষে তাকে মোটরসাইকেলসহ পুকুরে ফেলে দেয়া হয়। আজ মঙ্গলবার (২ মে) দুপুরে রাজৈর উপজেলা পরিষদের ভিতরে এ ঘটনাটি ঘটেছে।
ভুক্তভোগী আওয়ামী লীগ নেতার নাম খন্দকার আব্দুস সালাম (৫০)। তিনি রাজৈর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক।
পুলিশ, প্রত্যক্ষদর্শী ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দুপুর ১টার দিকে খন্দকার আব্দুস সালাম তার ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটি নিয়ে জমি রেজিস্ট্রির জন্য উপজেলা সাব রেজিস্টারের কার্যালয়ে যান। সাব রেজিস্টারের কার্যালয়ের প্রবেশ করতেই তার মোটরসাইকেলের গতিরোধ করে উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি হাসিবুল হাসান পিয়াল। পরে পিয়ালের ভাই আশিকুর রহমান পাভেলসহ ১০ থেকে ১২ জন মিলে খন্দকার আব্দুস সালাম বেধড়ক মারধর করেন। একপর্যায় তার হাত-পা ধরে উপজেলা চত্বরের পুকুরে ফেলে দেয় তারা। এ সময় তার ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটিও পুকুরে ফেলে দেয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
পরে স্থানীয়রা আহত আব্দুস সালামকে উদ্ধার করে রাজৈর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিকেলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান কর্তব্যরত চিকিৎসক।
আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা জানায়, ‘১৫ আগস্ট’ উপলক্ষে গত ৩১ আগস্ট খালিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের উদ্যোগে এক আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন রাজৈরে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খন্দকার আব্দুস সালাম। এ সময় তিনি রাজৈর উপজেলা আওয়ামী লীগের আরেক অংশের যুগ্ম আহ্বায়ক ফরিদা হাসান ওরফে পল্লবীর সমালোচনা করেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ২৯ সেপ্টেম্বর ফরিদা হাসান বাদী হয়ে সালামসহ উপজেলা আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে মানহানির মামলা দায়ের করেন। এরই জের ধরে ফরিদা হাসান পল্লবীর উপস্থিতিতে তার দুই ছেলে রাজৈর উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি পিয়াল ও পাভেলসহ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আব্দুস সালামকে একা পেয়ে মারধর করেছেন।
ভুক্তভোগী আওয়ামী লীগ নেতা খন্দকার আব্দুস সালাম বলেন, ‘আমার একটি জমির দলিল হওয়ার কথা ছিল। এ কারণে উপজেলা সাব রেজিস্ট্রি অফিসে যাই। উপজেলায় প্রবেশ করার পরেই পল্লবীর উপস্থিতিতে আমার ওপরে অতর্কিত হামলা চালায় তার ছেলেরা। মারধর করে আমাকে পুকুরে ফেলে দেয়। এমনকি পুকুরে নেমেও ওরা আমাকে মারধর করে। আমার পড়নে পায়জামা ছাড়া সব ছিঁড়ে ফেলেছে। পরে আমার মোটরসাইকেলটিও ওরা পুকুরে ফেলে দেয়। আমার পকেটে দলিল খরচের জন্য দুই লাখ টাকা, একটি সোনার চেইন, হাতঘড়ি, মোবাইল ফোন ছিল। মারধরের সময় ওরা আমার কাছে যা ছিল সব নিয়ে গেছে। আমি এ ঘটনার বিচার চাই।’
অভিযোগের বিষয় জানতে চাইলে রাজৈর উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি হাসিবুল হাসান পিয়াল মুঠোফোনে বলেন, ‘তিনি (খন্দকার আব্দুস সালাম) সিনিয়র মানুষ, তাকে কেন মারধর করবো? আমি রাজনীতি করি, তাই আমার দিকে আঙ্গুল কেউ তুলতেই পারে। তবে আমি যখন উপজেলায় যাই তখন দেখি তিনি উপজেলার পুকুরে ভিতরে। পরে তাকে পুকুর থেকে তুলেছি, সমস্যার কথা শুনেছি। পরে যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক খালিদ ভাই তাকে হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়। আমি শুনেছি, তিনি (খন্দকার আব্দুস সালাম) কোন এক লোকের সঙ্গে মোটরসাইকেলে ধাক্কা লেগে মোটরসাইকেলসহ পুকুরে পড়ে গেছেন। তার আগে কিছু ঘটছে কিনা তা আমি জানি না।’
এ সম্পর্কে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ মোল্লা তার বক্তব্যে বলেন, ‘পল্লবী ও তার ছেলে পিয়াল এরা কেউ আওয়ামী লীগ বা দলের কোনো অঙ্গসংগঠনের সঙ্গে নেই। তারা স্থানীয় সংসদ সদস্য শাজাহান লীগের কর্মী। এরাই উপজেলায় হাঙ্গামা মারামারি করে পরিবেশ নষ্ট করে আসছে। আওয়ামী লীগে না থেকেও আওয়ামী লীগের নাম ভাঙিয়ে অপকর্ম করছে। উপজেলা আওয়ামী লীগের এক সিনিয়র নেতাকে মারধর করে তার মোটরসাইকেলসহ পুকুরে ফেলে দেয়া জঘন্যতম দুঃসাহস। আমরা আইনিভাবে এই ঘটনার বিচার দাবি করছি। একইসঙ্গে এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’
এ সম্পর্কে রাজৈর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সঞ্জয় ঘোষ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘রাজৈরে আওয়ামী লীগের দুটি পক্ষ। একটি পক্ষ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির অন্যটি স্থানীয় সংসদ সদস্য শাজাহান খানের। মারধরের শিকার আওয়ামী লীগ নেতা আওয়ামী লীগের সভাপতির অনুসারী। তাকে যারা মারধর করেছে তারা সংসদ সদস্য শাজাহান খানের অনুসারী। মারধরের শিকার খন্দকার আব্দুস সালামের গুরুতর কোনো আঘাতের চিহ্ন নেই। তবে তাকে চরথাপ্পর ও কিল-ঘুষি মারা হয়েছে। তার হার্টে ওপেন সার্জারি করা। তাই এখান থেকে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।’