নিউজ ডেস্ক: যেকোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির ক্ষেত্রে বৈবাহিক অবস্থা লেখা বাধ্যতামূলক করা যাবে না বলে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট।

আজ বৃহস্পতিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি মো. খাইরুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ সংক্রান্ত রিটের রুল আংশিক মঞ্জুর করে রায় প্রদান করেন।

উক্ত আদালতে রিটের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী অনিক আর হক। আর রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাশ গুপ্ত। বৃহস্পতিবার রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাশ গুপ্ত।

রাজশাহীতে ধর্ষণের শিকার এক নার্সকে রাজশাহী সরকারি নার্সিং কলেজে ভর্তি না নেওয়ায় তিনি ২০১৩ সালে রিট করেছিলেন। সেই রিটেরই চূড়ান্ত নিষ্পত্তি করে আজ রায় দিলেন হাইকোর্ট।

গত ২০১৭ সালের ১৪ নভেম্বর একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত ‘মেয়েটি এখন কী করবে?’ শীর্ষক এক প্রতিবেদন যুক্ত করে সেই বছরের ১১ ডিসেম্বর হাইকোর্টে একটি রিট করেন ফাহ্রিয়া ফেরদৌস ও নাহিদ সুলতানা জেনি।

সেই প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৩ সালের ৬ জুন দশম শ্রেণিতে পড়ার সময় ধর্ষণের শিকার হন মেয়েটি। ধর্ষকের সঙ্গে মেয়েটির বিয়ে দেওয়ার জন্য গ্রামের লোকজন চাপ দিতে থাকেন। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদে এ নিয়ে সালিশও হয়। কিন্তু সেখানে অভিযুক্ত যুবক সবকিছু অস্বীকার করেন। সালিশ ভেঙে যায়। অভিযুক্তদের হুমকির মুখে মেয়েটির পরিবার মামলা করতে পারে না।  

একপর্যায়ে সন্তানসম্ভবা হলে মেয়েটিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) ভর্তি করা হয়। তখন ওসিসি থেকেই ধর্ষণ মামলা করা হয়। সেই মামলার পর পুলিশ আসামিকে গ্রেফতার করে।  

এরপর ওই যুবক, মেয়ে এবং তার সন্তানের ডিএনএ পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষায় প্রমাণ হয় ওই যুবকই শিশুটির বাবা। তখন আদালতে মামলার বিচার শুরু হয়। আদালত মেয়েটিকে ‘মহিলা সহায়তা কর্মসূচি’র রাজশাহী বিভাগীয় আবাসনকেন্দ্রে পাঠানোর নির্দেশ দেন।  

আবাসন কেন্দ্রে থাকাবস্থায় মেয়েটির এসএসসি পরীক্ষা শুরু হয়। পরীক্ষা চলাকালে ২০১৪ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একটি পুত্রসন্তানের জন্ম দেন সেই তরুণী।  

আবাসনকেন্দ্রে থাকতেই মেয়েটির এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়। বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৪.১৯ পেয়ে তিনি এসএসসি পাস করেন। পরে সেখান থেকেই এইচএসসি পরীক্ষাও অংশ নেন।  

অতঃপর ওসিসির আইনজীবী আশুরা খাতুন এবং জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির রাজশাহী বিভাগীয় সমন্বয়কারী দিল সেতারার সহযোগিতায় মেয়েটিকে বাড়িতে রেখে আসা হয়। এরই মধ্যে পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়। এবারও তিনি জিপিএ-৩.১৭ পেয়ে উত্তীর্ণ হন।  

এদিকে ২০১৪ সালের ৩০ মে আদালতের রায়ে ধর্ষকের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। আদালতের রায়ে সন্তানের দায়ভার বাবাকে নিতে বলা হয়। সেই সঙ্গে বাবার ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।

মেয়েটি নার্সিং কলেজে ভর্তি হওয়ার প্রস্তুতি গ্ৰহণ করে। কিন্তু সন্তান হওয়ার কারণে বিবাহিত না হলেও তরুণীটিকে ফেলা হয়েছে বিবাহিত নারীর কাতারে। তাই তিনি নার্সিং কলেজের ফরমই পূরণ করতে পারবেন না। বিয়ে না করলেও তার সন্তান রয়েছে। তাকে এখন বিবাহিত নারী হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে। অথবা ফরমে তাকে স্বামী পরিত্যক্ত লিখতে হবে। যদিও মেয়েটি কোনো ক্যাটাগরিতেই পড়েন না।

রাজশাহী সরকারি নার্সিং কলেজের অধ্যক্ষ মনিজ্জা খাতুন মেয়েটির অবস্থার কথা শুনে বলেন, নিয়মানুযায়ী ভর্তি পরীক্ষার ফরম পূরণ করার সময় অবশ্যই অবিবাহিত লিখতে হবে অথবা স্বামী পরিত্যক্ত লিখতে হবে। তা ছাড়া সন্তান হওয়ার বিষয়টি পরীক্ষায় ধরা পড়বে। এই ক্ষেত্রে মেয়েটিকে স্বামী পরিত্যক্ত লেখা ছাড়া উপায় নেই।